দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসা সম্পর্কে কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনার জবাব



দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু ভুল অভিযোগ প্রচার করা হয়েছে। এইসব বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এর নিকট তার মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি সময় নিয়ে প্রতিটি অভিযোগ শুনেন এবং তার মতামত প্রকাশ করেন- 

কুশল বিনিময় এরপর প্রথমে তার নিকট জানতে চাওয়া হয়। অনেকেই বলতেছে  দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসার সময়কাল ১০ বছর হয়ে গেলেও মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা ৩০০ ছাড়ায়নি, এই বছরই মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাবে এই বিষয়টি কতটুকু সত্য ? 

জবাবে দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ বলেন, যারা এই কথাটি বলতে চাচ্ছে আমি তাদের কাছে জানতে চাই, সহ-শিক্ষা অর্থাৎ ছাত্রী ব্যাতিত,বিজ্ঞান বিভাগ ব্যাতিত দারুসসুন্নত মডেল মাদ্রাসার সমান ছাত্র অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে আছে কিনা? তিনি আরো যোগ করেন, আমার জানামতে ভোলা জেলায় প্রাইভেট মাদ্রাসার নিরিখে  শুধু ছাত্র সংখ্যা দিক থেকে আমরাই সম্ভবত সর্বোচ্চ কিন্তু সহ শিক্ষা না থাকায় মোট শিক্ষার্থীর দিক থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে। 

অধ্যক্ষ মহোদয়কে বলা হয় যে দ্বিতীয় যেই কথাটি বাজারে চাউর হয়েছে তাহলে- মাদ্রাসার ক্লাস টাইম কম, বিকেলে ক্লাস হয় না অন্যান্য জায়গায় বিকেলেও ক্লাস হয়। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? 

জবাবে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলেন - যারা এই কথাটি বাজারে চাউর করেছে তারা কি বুঝে করেছে আমার জানা নাই অথচ আমরা শুনতে পাই, যেসব প্রতিষ্ঠানে বিকেলে ক্লাস হয় তাদের অভিভাবকদের মত অনুযায়ী সেসকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিকেলে হাতের লেখার জন্য এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের রেখে দেওয়া হয় যেটা শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে করতে পারতো আমরা তো রাত্রে অতিরিক্ত শিক্ষক রেখে ক্লাস করায় সেটা তো তারা করায়না। অনেক অভিভাবক বলে ছাত্রদের থেকে দুপুরের লাঞ্চের টাকা রাখার জন্যই তারা বিকালে ক্লাস চালু করছে। 

★ আপনাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় একটা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে দারুসসুন্নত মডেল মাদ্রাসা পথিত স্বৈরাচারদের জন্য কাজ করেছে?

এই প্রশ্ন শুনে স্বাভাবিকভাবে মুচকি হেসে তিনি বলেন, যারা এই অভিযোগটা করছে আমি তাদেরকে জ্ঞাতার্থে বলতে চাই বিগত সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে আমাদের মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি আমরা সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের নিয়ে একত্রে পর্দা লাগিয়ে দেখিনি কিন্তু তাদের দেখতে দেখা গেছে। তাদের কাছে যদি সেটা টিকে থাকার কৌশল হয় তাহলে আমরা যদি সামান্য কিছুও করে থাকি তাহলে সেটা কৌশল হবে না কেন?

আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি  অনেক জায়গায় একটি কথা প্রচলিত হয়েছে যে আপনারা নাকি  ভয় পেয়ে ৫ই আগস্ট এর পরে মডেল মাদ্রাসা কয়েকদিন বন্ধ রেখেছিলেন বা আত্নগোপনে গিয়েছিলেন?

এ প্রশ্ন শুনে অধ্যক্ষ মহোদয় বলেন - আমি বিরুদ্ধবাদীদের এই মিথ্যাচারের কি উত্তর দিবো সেটাই বুঝছিনা। যে জিনিসের কোনই সত্যতা নাই, তার কোন উত্তর আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। অথচ আমরা জুলাই মাসেও ক্লাস করেছিলাম, আমরা ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের দেওয়া অসহযোগ আন্দোলনের কারণে মাদ্রাসা বন্ধ রেখেছিলাম তারপর আগস্ট মাসের ৫ তারিখ সরকার পতনের পরদিন থেকে মাদ্রাসার পাঠদান ধারাবাহিকভাবে হয়েছে।

★ বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসায় কোন মানসম্মত শিক্ষক নাই এবং শিক্ষকরা বেশিদিন থাকে না? 

জবাবে অধ্যক্ষ মহোদয় বলেন, যারা এই কথাটি বলে আমি তাদের উদ্দেশ্যে একটি তথ্য জানাতে চাই, বিগত তিন বছরে আমরা মাত্র চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি বা পালাবদল করেছি। 

এ বছর আমদের দুইজন শিক্ষক বিভিন্ন কারণে এবং দুইজন শিক্ষক অন্যত্র চাকরি হয়ে চলে যাওয়ায় আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি প্রায় প্রতিষ্ঠানে দশের অধিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে সেটা প্রায় এক বছর যাবতীয় হয়ে আসছে।

আপনারা অভিযোগ করার আগে কিছুটা ফ্যাক্ট চ্যাক করে নিন। আর মানসম্মত শিক্ষকের বিষয়ে আমি একটা মজার অভিজ্ঞতা শুনাচ্ছি তাহলো- যখন তারা মাদ্রাসায় থাকে তখন পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠান ও অন্য প্রতিষ্ঠান এর অভিভাবকরা বলে দারুসসুন্নাত এ কোন শিক্ষক আছে নাকি? কোন আরবী শিক্ষক নাই, ইংরেজি শিক্ষক নাই, কে অংক করায়, কিতাব পড়ানোর মতো কেউ আছে নাকি? কি ছোট ছোট শিক্ষক ইত্যাদি। 

আর যখন কোন শিক্ষক আমাদের মাদ্রাসা থেকে চলে যায় বা অন্য প্রতিষ্ঠান এ যায় তখন তাদের কাছেই উনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, তার মতো শিক্ষক নাই। আমাদের শিক্ষক যদি অন্য কোন প্রতিষ্ঠান পায় তাদের মতে এতোদিন যে কিছুই পারতোনা তাদের কাছেই সে সর্বজ্ঞানী হয়ে যায়।

আমি তাদের বলতে চাই, দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসার প্রতিটি শিক্ষক ভালোই নয় বরং যেমন মেধাবী,জ্ঞানী তেমন কর্মঠ, এমনকি পুরো ভোলা জেলার প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক স্টাফ আমাদের। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে এদের মাধ্যমেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু নায়েবে নবী ও হাদীউজ্জামান বের হবে। যারা হবে আমাদের নাজাতের উছিলা। 

আলহামদুলিল্লাহ,আমাদের মাদ্রাসার যোগ্য মান সম্মত শিক্ষক ছিল এবং আছে বিধায় আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, আল বুখারা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালযয়ে এবং বাংলাদেশের ঢাবি,চবি,ববি,জবি সহ বাংলাদেশের প্রায় বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ছাত্র অধ্যায়ন করতেছে। 

★ একটা কথা প্রায় শোনা যায় দারুসসুন্নাত হিফজ শাখায় পড়াশোনা হয় না। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ বা সমালোচনা কি আপনার কাছে এসেছে? 

জবাবে তিনি বলেন হ্যাঁ আমি এক অভিযোগটা শুনেছি। যার কোন ভিত্তিই নাই, এই পর্যন্ত দারুসসুন্নাত মডেল মাদ্রাসার হিফজ শাখা থেকে ১০ জন ছাত্র হিফজ শেষ করেছেন যারা সবাই কায়দা থেকে শুরু করে হিফজ শেষ করেছে এবং তারা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এবং পড়াশোনায় ব্যস্ত আছেন এবং তারা অনেকেই দুই বছর বা এক বছর করে তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন। মাদ্রাসা থেকে এর চেয়ে বেশি কি আপনি চান। তাছাড়া আপনাদের যদি কোন উন্নতি দরকার হয় পরামর্শ দিবেন আমরা করব।

সর্বপরি আমি বলতে চাই, নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রতি আস্থা না থাকলেই মানুষ সাধারণত অন্যর দোষ চর্চার মাধ্যমে উপরে উঠতে চায় বা সফল হতে চায়। এবং ঢিল ঐ গাছে–ই ছোড়া হয়, যে গাছে ফল থাকে। তাই এইসব মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। এই মাদ্রাসার জন্য মক্কাতুল মোকাররমা ও মদিনাতুল মুনাওয়ারার প্র‍তিটি দুয়া কবুলের জায়গায় দুয়া করা হয়েছে। ইনশাল্লাহ আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তায়ালা মাদ্রাসাটিকে কবুল করে নিয়েছেন।

আমরা সকলের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন মাদ্রাসাটিকে সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত রেখে দ্বীনের মারকায হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম রাখেন।